উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র হাট-বাজার। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সর্বমোট ১৮ টি বাজার রয়েছে। এগুলোতে সপ্তাহে একদিন বা দু‘দিন বসে হাট, অবশিষ্ট দিনসমূহে উক্ত স্থান বাজার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। হাটে যেমন বারোয়ারী পণ্য উপস্থাপিত হয়, বাজারে ঐ রকম সকল পণ্য বিক্রির জন্য উপস্থাপিত না হলেও স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত শাক সবজি, মাছ, দুধসহ পচনশীল দ্রব্যাদি কেনাবেচা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাজারে অবস্থিত মুদি দোকান সমূহ ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। বাসাইল উপজেলার হাট-বাজার সমূহের বিবরণ নিম্নরূপঃ
১। বাসাইল হাটঃ
বাসাইল উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের বাসাইল মৌজায় ৪.১৬ একর জমির মধ্যে বাসাইল বাজারটি অবস্থিত। তন্মধ্যে তোহা বাজার ৩.৭০ একর এবং চান্দিনা ভিট ০.৪৬ একর। বাজারটি উপজেলার প্রধান বাজার। প্রতি সোমবার এখানে হাট বসে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন এখানে দৈনন্দিন বাজার হিসাবে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কেনাবেচা হয়ে থাকে। বাসাইল-নলুয়া সড়কের পাশেই এর অবস্থান। মূলত মরাগাঙ্গের তীর ঘেঁষে স্থাপিত এ বাজারটি বর্তমানে বিস্তৃত হয়েছে বহুলাংশে। বাসাইল- নলুয়া সড়কের উভয় পাশেই হাটের দিন বিক্রেতাগণ তাদের পসরা নিয়ে বসেন। বর্ষাকালে আশপাশের গ্রামের লোকজন নৌকাযোগে সহজেই এই বাজারে উপস্থিত হন। প্রতিদিন ভোরে এই বাজারে মাছের আড়ৎ বসে। এ বাজারটি বাসাইল উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিধায় উপজেলা সদরের আশপাশের লোকজন এর দ্বারা উপকৃত হন এবং এটি উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।।
২। বালিয়া হাটঃ
বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের বালিয়া মৌজায় ২.১৮ একর জমির উপর অত্র বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। তন্মধ্যে ১.৯০ একর তোহা বাজার, অবশিষ্ট ০.২৮ একর চান্দিনা ভিট। এক সময় এ বাজারটি অত্যন্ত জমজমাট ছিল। সেসময় সখিপুর পাহাড়ের কাঠ, বাঁশ, কাঁঠাল, কলাসহ বিভিন্ন ফল ফলাদির জন্য বাজারটি বিখ্যাত ছিল। কিন্তু বর্তমানে রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন ও স্বাভাবিক জল প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এবং পার্শ্ববর্তী বাজারসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ায় এ বাজারটি তার কৌলিন্য হারিয়েছে। সপ্তাহে প্রতি রবিবার এখানে হাট বসে। অন্যান্য দিন বাজার না বসলেও ভোরে সামান্য পরিমাণে দুধ ও মাছের কেনা-বেচা হয়। বালিয়া গ্রামের আশপাশের লোকজন এ হাটে পণ্য-সামগ্রী কেনা-বেচা করে থাকেন। হাটের পাশ দিয়ে প্রবাহিত লাংগুলিয়া নদী বেয়ে হাটের দিন পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন এখানে উপস্থিত হন। উপজেলা সদর হতে বাসাইল উত্তরপাড়া-মাইজখাড়া হয়ে বালিয়া হাট। আর কাশিল থেকে পিচুরি, স্থলবল্লা, ফুলবাড়ি হয়ে এ হাটে পৌঁছা যায়। কাউলজানী থেকে নয়ার হাট হয়ে লাংগুলিয়া নদী পার হয়ে বালিয়া হাট পৌঁছা যায়। তবে যেকোন দিক থেকে বালিয়া যেতে হলে কাঁচা রাস্তা পার হতে হয়। একারণে শুষ্ক মৌসুমের তুলনায় বর্ষাকালে বালিয়া হাটের লোক ও পণ্য সমাগম বেশী হয়ে থাকে।
৩। ময়থা হাটঃ
ফুলকী ইউনিয়নের ময়থা মৌজায় মোট ২.৫৬ একর জমিতে এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে তোহা বাজার ২.৩০ একর। অবশিষ্ট ০.২৬ একর চান্দিনা ভিট। বাজারটি বেশ জমজমাট। বাজার সংলগ্ন ময়থা জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, ময়থা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় একং ফুলকী ইউনিয়ন অবস্থিত হওয়ায় ইউনিয়নের মধ্যে এ বাজারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে প্রতি রবিবার এখানে হাট বসে। তবে সারা সপ্তাহ মুদি দোকানসমূহ খোলা থাকায় এলাকাটি কোলাহল ও কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ থাকে। উপজেলা সদর হতে কাশিল বটতলা হয়ে বাথুলী সাদী বাজার পার হয়ে দেউলী-মুড়াকৈ, হয়ে আবার কাশিল-ফুলকী সড়ক ধরে আইক পাড়া, সাধুলী পাড়া হয়েও ময়থা পৌঁছা যায়। তবে বাজারে পৌঁছার সকল পথই কাঁচা। বর্ষাকালে রাস্তা-ঘাট ও আশ-পাশের এলাকা ডুবে গেলে সহজে ময়থা বাজারে নৌকা নিয়ে প্রবেশ করা যায়। এ কারণে বর্ষাকালেও ময়থা বাজার থাকে সরগরম।
৪। আইসড়া হাটঃ
ফুলকী ইউনিয়নের আইসড়া মৌজায় মোট ২.৫০ একর জমির উপরে আইসড়া বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। তন্মধ্যে তোহা বাজার ১.৫০ একর, চান্দিনা ভিট ০.৩৫ একর। অবশিষ্ট ০.৬৫ একর জমি এখনও নীচু পতিত। বাজারটি শত বছরের পুরনো বলে এলাকাবাসী দাবী করেন। বাজারটি বেশ জমজমাট। বাজারটি বাসাইল উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। অপর পারে কালিহাতী উপজেলা। আইসড়া বাজারে যোগাযোগের জন্য উপজেলা সড়কটি কাঁচা। পার্শ্ববর্তী আইসড়া খালটি পার হলেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়ন। জেলা সদরের সাথে ঘারিন্দার যোগাযোগ তুলনামূলক ভাবে ভাল। সম্প্রতি ঝিনাই শাখা নদীটির উপরে ব্রীজ নির্মিত হওয়ায় আইসড়াবাসী অনায়াসে ঘারিন্দা হয়ে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। এ কারণে আইসড়া বাজারটি বর্তমানে আগের অবস্থানে নেই। পার্শ্ববর্তী স্থানে আইসড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি অবস্থিত হওয়ায় সারা সপ্তাহেই এর দোকান-পাটসমূহে বেচাকেনা চলে। প্রতি বুধবার এখানে হাট বসে এবং নিয়মিত সকালে বাজার বসে। উপজেলা সদর হতে বাসাইল-টাঙ্গাইল সড়কের নথখোলা ব্রীজের পূর্ব পাশ দিয়ে কামুটিয়া-দেউলী-জশিহাটি হয়ে আইসড়া বাজারে পৌঁছা যায়। বর্ষাতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পেলে আইসড়া খালও এ বাজারে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫। সুন্না হাটঃ
কাউলজানী ইউনিয়নের সুন্না মৌজায় মোট ২.০৭ একর জমির উপর সুন্না হাট অবস্থিত। ১.৭২ একর জমি তোহা বাজার ও ০.৩৫ একর জমির উপর চান্দিনা ভিটি অবস্থিত। বাজারটি বেশ জমজমাট। বাজারটির আশেপাশে সুন্না সম্মিলিত আলীম মাদ্রাসা, সুন্না আববাসীয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং সুন্না সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত হওয়ায় এটি সারা সপ্তাহই সচল থাকে। প্রতি শুক্রবার বসে হাট আর প্রতিদিন সকালে বসে বাজার। বংশাই নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় আশপাশের লোকজন সহজেই বাজারে আসতে পারে। উপজেলা সদর হতে বাসাইল-কাউলজানী সড়কের মাঝামাঝি কলিয়া থেকে সুন্না রাস্তা পৃথক হয়ে গেছে। মাঝে বেংরাখালী সেতু নির্মিত হলে বাসাইল থেকে সরাসরি সুন্না বাজারে পৌঁছা যাবে।
৬। ডুমনীবাড়ী হাটঃ
কাউলজানী ইউনিয়নে ডুমনীবাড়ী মৌজায় ১.৫৭ একর জমির উপর এ হাট অবস্থিত। ১.৩১ একরের উপরে তোহা বাজার, অবশিষ্ট ০.২৬ একরের মধ্যে চান্দিনা ভিট। বংশাই নদীর পারেই এ বাজারটি অবস্থিত। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা মিটালেও এ বাজারটি খুব একটা উন্নত নয়। সপ্তাহে প্রতি বুধবার এ হাটটি বসে। ডুমনীবাড়ী সহ আশেপাশে গ্রামের লোকজন এ বাজারে অনিয়মিত ভাবে কেনা কাটার জন্য উপস্থিত হন। বাসাইল-কাউলজানী সড়কের বোর্ডবাজার হতে পূর্ব দিকে কাঁচা রাস্তা দিয়ে কিছু দূর এগুলে এই ডুমনীবাড়ী বাজার। বংশাই নদী এ বাজারের উন্নয়নে তেমন কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
৭। কাউলজানীর নয়ার হাটঃ
কাউলজানী ইউনিয়নের কাউলজানী মৌজায় ১.৯৫ একর জমির উপর এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। তন্মধ্যে তোহা বাজার ১.৭৫ একর এবং চান্দিনা ভিটি ০.২০ একর। বাজারটি এক সময় ছিল খুবই জমজমাট। জানা যায় স্থানীয় বিরোধকে কেন্দ্র করে বালিয়া বাজার থেকে আলাদা হয়ে স্থানীয় লোকজন এ বাজার প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে বাজারটিতে ১টি সারের দোকান, বেশ কটি মুদি দোকান ও কয়েকটি চায়ের দোকান রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা যথেষ্ট থাকলেও বাসাইলের সাথে সড়ক ও অন্যান্য যোগাযোগ সহজ হওয়ায় বাজারের লোক সমাগম কমে গেছে। বাসাইল-কাউলজানী সড়ক থেকে মাত্র ৩০০ গজ পশ্চিমে এ বাজারটির অবস্থান। বর্ষাকালে সরাসরি বাসাইল সহ পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে এ বাজারে যাতায়াত করা যায়। তবে বাসাইল থেকে মাইজখাড়া হয়ে একটি কাঁচা সড়ক নয়ার বাজারে পৌঁছলেও বর্ষাকালে সড়কটি থাকে পানির নীচে। সপ্তাহের প্রতি শনিবার এ হাটটি বসলেও গুরুত্বপূর্ণ কেনা কাটার জন্য লোকজন বাসাইল বাজার, কাউলজানী বোর্ড বাজার এবং লাঙ্গুলিয়া নদী পার হয়ে পার্শ্ববর্তী বালিয়া হাটে গমন করে থাকে। পুরনো বিরোধের কথা বয়স্ক লোকের কারো কারো মনে থাকলেও তরুণ কিশোররা সে কথা জানতেও পারেনি। অনেকেই বিরোধের কথা বিস্মৃত হয়েছেন। কিন্তু নয়ার হাট তার অবস্থান দিয়ে বার বার পুরনো কথা মনে করিয়ে দেয়।
৮। কাউলজানী পুরাতন হাটঃ
কাউলজানী মৌজায় ১.২৬ একর জমি নিয়ে এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। তন্মধ্যে ১ একর তোহা বাজার এবং ০.২৬ একর চান্দিনা ভিটি। এ বাজারটি বেশ জমজমাট। সখিপুর পাহাড়ের কাঠ, বাঁশ ও ফল ফলাদি আমদানী হয় এ বাজারে। বংশাই এবং লাঙ্গুলিয়া নদীর সংযোগ স্থলে এ হাটটি অবস্থিত। সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার দুই দিন এ হাট বসে। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে কাউলজানী এবং আশেপাশের গ্রামের লোকজন তাদের নৈমিত্তিক কেনাকাটার জন্য এ বাজারটি ব্যবহার করেন। উপজেলা সদর হতে কাউলজানী বোর্ডবাজার পর্যন্ত রাস্তা পাকা, আর বোর্ডবাজার থেকে পুরাতন হাট পর্যন্ত রাস্তা কাঁচা। শুস্ক মৌসুমের তুলনায় বর্ষা মৌসুমে এ বাজারে লোক সমাগম এবং কেনা কাটা বৃদ্ধি পায়।
৯। বাথুলী সাদী হাটঃ
কাশিল ইউনিয়নের পিচুরি মৌজার ১.২০ একর জমির মধ্যে এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। তন্মধ্যে তোহা বাজার ০.৯০ একর এবং চান্দিনা ভিট ০.৩০ একর। বাজারটি মোটামুটি ব্যস্ত। সপ্তাহে মঙ্গলবার এখানে হাট এবং প্রতিদিন সকালে বাজার বসে। কাশিল, নথখোলা, কামুটিয়া, বাথুলী, দেউলীসহ আশে পাশের লোকজন এ বাজারে কেনা কাটা করে থাকেন। বাসাইল-টাঙ্গাইল সড়কের কাশিল বটতলা থেকে ৫০০ গজ উত্তরে এই বাথুলী বাজার। নদী সংযোগ না থাকলেও বর্ষাকালে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে নৌকাযোগে এ বাজারে আসা যায়।
১০। কাঞ্চনপুর হালুয়াপাড়া হাটঃ
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর মৌজায় ১.৭১ একর জমির মধ্যে এই হাটটি অবস্থিত। এর ১.৩০ একর তোহা বাজার এবং ০.৪১ একর চান্দিনা ভিটি। বাজারটি বহুদিনের পুরাতন। সম্প্রতি এলজিইডি বিভাগ থেকে গ্রোথ সেন্টার হিসাবে বাজারটি উন্নয়ন করা হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে বাসাইল পাথরঘাটা সড়ক থেকে ঢংপাড়া হয়ে পাকা রাস্তা ধরে ৩০০ মিটার দক্ষিণে এই হাট। প্রতি শুক্রবার এখানে হাট বসে। এই হাট সংলগ্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিস, অবস্থিত হওয়ায় লোকজনকে এখানে যাতায়াত করতে হয়। সম্প্রতি ঢংপাড়া মোড়ে বেশ কিছু দোকান-পাট গঁজিয়ে উঠায় এবং কাঞ্চনপুর মাদ্রাসা বাজার ও নয়া বাজার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এখানে লোকজনের সমাগম ঘটে কম। হাটবার ছাড়া এখানে তেমন কোন জন সমাগম ঘটেনা।
১১। কাঞ্চনপুর বিলপাড়া হাটঃ
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর মৌজায় উপজেলা সীমান্তে ঝিনাই নদীর পারে এ বাজারটি অবস্থিত। এর মোট জমির পরিমাণ ১.৯৩ একর। তার মধ্যে তোহা বাজার ১.৭৩ একর এবং চান্দিনা ভিটি ০.২০ একর। বাজারটি বেশ জমজমাট। উপজেলা সদর থেকে আদাজান হয়ে ঝিনাই নদী পার হলেই কাঞ্চনপুর বিলপাড়া হাট। সদরের আদাজান, হাবলার টেংগুরিয়াপাড়া এবং মির্জাপুর উপজেলার আদাবাড়ির লোকজন মূলত এ বাজার ব্যবহার করে থাকেন। সপ্তাহে রবিবার এখানে হাট বসে এবং প্রতিদিন সকালে বাজার বসে। ঝিনাই পার হয়ে বাসাইল পর্যন্ত রাস্তা পাকা। হাবলা এবং মির্জাপুরের আদাবাড়ির সাথে সংযোগ রাক্ষাকারী রাস্তাসমূহ এখনো কাঁচা। বর্ষাকালে ঝিনাই নদীর কারণে জন ও পণ্য পরিবহণে বেশ সুবিধা হয়।
১২। মটরা হাটঃ
হাবলা ইউনিয়নের মটরা মৌজায় লৌহজং নদীর পারে এ বাজারটি অবস্থিত। এর মোট জমির পরিমাণ ১.৫৫ একর। তন্মধ্যে তোহা বাজার ১.১০ একর এবং চান্দিনা ভিটি ০.৫১ একর। বাজারটি বেশ জমজমাট। উপজেলা সদর হতে বাসাইল করটিয়া হতে করাতিপাড়া বাইপাস হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামতলী মোড় হয়ে পশ্চিমে কাঁচা রাস্তায় নাহালী, লৌহজং উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যেতে হয়। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার এখানে হাট বসে এবং প্রতিদিন সকালে বাজার বসে। একটি গ্রোথ সেন্টার হিসাবে এ বাজার স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাজারটিতে এলজিইডি/কেয়ার কর্তৃক নির্মিত বিল্ডিং-এ ৬ (ছয়) জন দুঃস্থ মহিলাদের দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
১৩। ঈশ্বরগঞ্জ হাটঃ
বাসাইল ইউনিয়নের মিরিকপুর মৌজায় ঈশ্বরগঞ্জ হাটটি অবস্থিত। এর মোট আয়তন ১.৫৩ একর। তন্মধ্যে ০.৭৬ একর তোহা বাজার। অবশিষ্ট ০.৭৪ একর চান্দিনা ভিটি। সপ্তাহে প্রতি সোমবার এখানে হাট বসে। তবে প্রতিদিন সকালে এখানে পণ্য সামগ্রী কেনা-বেচা হয়। সম্প্রতি ঈশ্বরগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের ফলে এই হাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। একটি গ্রোথ সেন্টার হিসাবে অচিরেই বাজারটির উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে জানা যায়। বাসাইল-নলুয়া সড়ক থেকে মাত্র ৩০০ মিটার উত্তরে এ বাজারটি অবস্থিত। হান্দুলী, নাইকানী বাড়ী, বর্ণিকিশোরী, বন্দে-কুমারজানী এলাকার লোকজন বাজারটি ব্যবহার করে থাকেন। বর্ষাকালে এ বাজারের লোক সমাগম ও পণ্য সমাগম বাড়ে।
১৪। সৈদামপুর বাজারঃ
বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈদামপুর মৌজায় এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। সদ্য প্রতিষ্ঠিত এ বাজারের মোট জমির পরিমাণ ০.৯৭ একর। তন্মধ্যে তোহা বাজারের পরিমাণ ০.৫০ একর এবং অবশিষ্ট ০.৪৭ একর চান্দিনা ভিটি। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গল বার এই হাট বসে। সংলগ্ন সৈদামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত থাকায় সপ্তাহের অন্যান্য দিনও মুদি কেনা কাটা সহ বাজারটি সরগরম থাকে। স্থানীয় বেশ কয়েকটি উদ্যোগী পরিবার এ বাজারটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় সৈদামপুর এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন এ বাজারটি ব্যবহার করে থাকেন। বাসাইল-পাথরঘাটা সড়ক ধরে কাঞ্চনপুর ঢংপাড়া পার হয়ে কিছু দূর এগিয়ে মূল সড়ক থেকে ২০০ মিটার উত্তরে এ বাজারের অবস্থান। শুস্ক মৌসুমে কাঁচা সড়ক ধরে এ বাজারে যাতায়াত সম্ভব হলেও বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া আর কোন গতি থাকে না।
১৫। ফুলকী পশ্চিম পাড়া বাজারঃ
ফুলকী ইউনিয়নের ফুলকী মৌজায় এ বাজারটি অবস্থিত। প্রতি শুক্র ও মংগলবার এখানে হাট বসে। প্রতিদিন সকালে দুধ,মাছসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা বেচা হয়ে থাকে। ফুলকী ঝনঝনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এ বাজারটি মূলত স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে ৭/৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাজারটি এখন পর্যন্ত তেমনভাবে জমে উঠেনি।
১৬। জশিহাটী বাজারঃ
বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের জশিহাটী মৌজায় মাত্র কয়েক বছর আগে এ বাজারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতি মংগলবার এখানে হাট বসে। প্রতিদিন সকালে দুধ, মাছসহ কাঁচা শাক শবজি কেনা বেচা হয়ে থাকে।
১৭। ময়থা উত্তরপাড়া ঝনঝনিয়া বাজারঃ
ফুলকী ইউনিয়নের ময়থা মৌজায় এ বাজারটি প্রতিষ্ঠিত। বেশকটি মুদি দোকান এখানে গড়ে উঠেছে। এখানে কোন হাট বসেনা। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি সামগ্রীসহ ঔষধপত্র পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে কয়েকটি ফোন ফ্যাক্সের দোকানও গড়ে উঠেছে। ময়থা এবং ঝনঝনিয়ার লোকজন সময় কাটাতে ও প্রয়োজনীয় ছোটখাট কেনা কাটার জন্য এ বাজারে এসে থাকেন। বাজারটি ফুটানির বাজার নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি রয়েছে।
১৮। খাটরা শান্তি বাজারঃ
খাটরা মৌজায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত এ বাজারটি স্থানীয়ভাবে লোকজনকে আকৃষ্ট করলেও এখানে কোন বাজারের অকাঠামো গড়ে উঠেনি। কোন সাপ্তাহিক বাজার এখানে বসেনা। কয়েকটি মুদি দোকান রয়েছে। স্থানীয় লোকজন তাদের অবসর সময় কাটানোর জন্য এখানে এসে থাকেন। কয়েকটি মুদি দোকান ও দুটি ফোন ফ্যাক্সের ও কয়েকটি চায়ের দোকান নিয়ে এ বাজারের অবস্থান। প্রতিদিন সকালে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দুধ,শাক-শবজি এবং মাছ কেনা বেচা হয়। রামপুর, কাউলজানী, বাদিয়াজানের গ্রামের কিছু কিছু লোক এ বাজারে কেনাকাটা করে।
বাসাইলের খেয়াঘাট
গ্রামীণ জনপদে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পায়ে চলা পথই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় নদী, খাল বা জলাশয় থাকায় সাবলীল যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এইসব ক্ষেত্রে খেয়াঘাট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুকনা মৌসুমে খেয়াঘাট যোগাযোগে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। বর্ষা মৌসুমে খেয়াঘাটগুলি অধিক সচল হয়। বাসাইল উপজেলায় এই ধরণের খেয়াঘাটের সংখ্যা প্রচুর। তবে ব্রীজ, কালভার্ট ও বিকল্প সড়ক উন্নয়নের ফলে এইসব খেয়াঘাটের গুরুত্ব অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। বাসাইল উপজেলার উল্লেখযোগ্য খেয়াঘাটসমূহ নিম্নরূপঃ
১) খাটরা খেয়াঘাটঃ এই খেয়াঘাট খাটরা-কাউলজানীর লোকজন যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে। এই খেয়াঘাটটি লাংগুলিয়া নদীর উপর অবস্থিত।
2) হালিয়ার ঘাট খেয়াঘাটঃ বালিয়া হাটের পূর্বে লাংগুলিয়া নদীর উপর এই খেয়াঘাটটি অবস্থিত।
৩) বাশি সাহার খেয়াঘাটঃ বালিয়া হাটের দক্ষিণে বাসাইল মাইজখাড়া হয়ে বালিয়া যেতে এই খেয়াঘাটটি ব্যবহার করা হয়।
৪) বাসাইল স্যালো ঘাটঃ বাসাইল ব্রীজ এবং বাসাইল-কাউলজানী সড়ক পাকা হয়ে যাওয়ায় এই খেয়াঘাটটি বর্তমানে
অকার্যকর। তবে একসময় এই ঘাট ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্ষাকালে কিছু কিছু নৌকা এখনও এই ঘাট ব্যবহার করে।
৫) বাদিয়াজান খেয়াঘাটঃ এই খেয়াঘাট হয়ে লোকজন কাউলজানী হতে বাদিয়াজান হয়ে ফুলকীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা
করে থাকে। বর্তমানে বাদিয়াজান ফুটব্রীজ হয়ে যাওয়ায় এই ঘাটটি বিলুপ্ত হয়েছে।
৬) নয়ারখাল খেয়াঘাটঃ কাউলজানী নয়ারহাট থেকে বালিয়া বাজার এর সাথে যোগাযোগে এই ঘাটটি ব্যবহার করা হয়ে
থাকে। তবে বর্তমানে নয়ার খালের দুই পার্শ্বে দুটি হাট যথাক্রমে বালিয়া ও নয়ার হাট প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই খেয়াঘাটের গুরুত্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
৭) কাউলজানী পুরাতন হাটখোলা খেয়াঘাটঃ কাউলজানী পুরাতন হাট সংলগ্ন বংশাই নদীতে এই খেয়াঘাট কাউলজানী,
মান্দারজানী ও বালিয়ার লোকজনের যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে। শুকনা মৌসুমে এই খেয়াঘাটের গুরুত্ব অনেক বেশী।
৮) সুন্না খেয়াঘাটঃ বংশাই নদীর উপর সুন্না খেয়াঘাটটি অবস্থিত। সুন্না-গিলাবাড়ী এবং দাড়িয়াপুর যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই
খেয়াঘাটটি ব্যবহৃত হয়।
৯) ব্যংরাখালী খেয়াঘাটঃ বাসাইল থেকে সু্ন্না যোগাযোগের ক্ষেত্রে কলিয়া পার হয়ে ব্যংরাখালী খেয়া পার হতে হয়।
সম্প্রতি এখানে ব্রীজ নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
১০) আদাজান খেয়াঘাটঃ বাসাইল থেকে বিলপাড়া বাজার যেতে এবং বিলপাড়া, নাটিয়াপাড়া থেকে বাসাইল আসতে এই
খেয়াঘাটটি পার হতে হয়।
১১) পাথরঘাটা খেয়াঘাটঃ কাঞ্চনপুর-সিংগারডাকের সাথে মির্জাপুরের পাথরঘাটা, গোড়াই, হাটুভাংগা এর সাথে যোগাযোগ
রক্ষায় বংশাই নদীর উপর এই খেয়াঘাটটি পার হতে হয়। এটি বাসাইল উপজেলার শেষ সীমায় অবস্থিত।
১২) সৈদামপুর খেয়াঘাটঃ কাঞ্চনপুরের সৈদামপুর হতে সখীপুরের হাতীবান্দা যেতে বংশাই নদীর উপর এই খেয়াঘাট পার
হতে হয়।
১৩) কাঞ্চনপুর দক্ষিণপাড়া খেয়াঘাটঃ কাঞ্চনপুর থেকে নাটিয়াপাড়া, আদাবাড়ী যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঝিনাই নদীর উপর
এই খেয়াঘাটটি অবস্থিত। প্রতিদিন অনেক লোক যাতায়াতের জন্য এই খেয়াঘাটটি ব্যবহার করে।
উল্লেখিত খেয়াঘাটসমূহ ছাড়াও আরও কিছু ছোট ছোট খেয়াঘাট রয়েছে। সড়ক ও বিকল্প পথ সৃষ্টি হওয়াতে এই খেয়াঘাটগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। যেমনঃ রাসড়া-চাকদহ খেয়াঘাট, কাশিল খেয়াঘাট প্রভৃতি।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস