Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রাকৃতিক সম্পদ

বাসাইল উপজেলার আয়তন ১৫৮ বর্গকিলোমিটার। এই এলাকায় বসবাসকারী পরিবারের ৯০ ভাগই হচ্ছে কৃষি নির্ভর পরিবার। উপজেলার মোট ২৭,১৬৩ টি কৃষি পরিবার রয়েছে। তম্মধ্যে বড় চাষী যাদের জমি ৩ হেক্টরের উপরে তাদের সংখ্যা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী ১,০১০ টি। মাঝারি চাষী যাদের জমির পরিমাণ ১-৩ হেক্টরের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাদের সংখ্যা ৪,৪৫৬ টি পরিবার। অবশিষ্ট ২১,৬৯৭টি পরিবার ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন চাষী যাদের মোট জমির পরিমাণ ১ হেক্টরের নীচে। উপজেলার মোট জমির পরিমাণ-১৫,৮০০ হেক্টর। তম্মধ্যে নীট ফসলের জমি-১৩,১২৪ হেক্টর। উপজেলার মোট খাদ্য শস্যের চাহিদা প্রায় ৩৫,০০০ মেঃ টন এবং খাদ্য শস্যের উৎপাদন প্রায় ৪৫,০০০ মেঃ টন। খাদ্য শস্য উৎপাদনের বিবেচনায় বাসাইল উপজেলা উদ্বৃত্ত অঞ্চল। উপজেলার নীট ১৩,১২৪ হেক্টর জমির মধ্যে-

                ক)            উচু জমি ঃ  উপজেলার এ জাতীয় জমি সারা বছর বন্যামুক্ত থাকে। এর পরিমাণ ২০২ হেক্টর। জশিহাটী, একঢালা, বাথুলীসাদী, দাপনাজোর, থুপিয়া, করাতিপাড়া, বাঐখোলা, গুল্লা, মটরা ও  নাহালী গ্রাম এ জাতীয় জমির অর্ন্তভুক্ত।

                খ)             মধ্যম উচুঃ   এ জাতীয় জমিতে বর্ষাকালে সর্বোচ্চ ৩’ ফুট পর্যন্ত পানি জমে। উপজেলার মোট ৩,৫৫২ হেক্টর জমি মধ্যম উচু জাতীয় জমি। বাসাইল সদর এলাকা, কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়া, সুন্না, কাউলজানী, হাবলা, হাকিমপুর এবং  গুল্লা ও কাশিল গ্রামের অংশ বিশেষ এ জাতীয় জমির অন্তর্ভুক্ত।  

গ)     মধ্যম নীচুঃ এ জাতীয় জমিতে বর্ষাকালে সর্বোচ্চ ৩’-৬’ ফুট পর্যন্ত পানি জমে। উপজেলার মোট ২,৫৪১ হেক্টর জমি মধ্যম নীচু জাতীয় জমি। ফুলকী, ময়থা, পূর্বপৌলী, কাশিল, বাদিয়াজান, বালিয়া, বার্থা, কাউলজানীর অংশ বিশেষ, বাঘুয়া, দেউলী, নেধার, সোনালিয়া ও আইসড়া গ্রাম এ জাতীয় জমির অন্তর্ভুক্ত।

ঘ)             নীচু জমিঃ এ জাতীয় জমিতে বর্ষাকালে ৬’ ফুটের অধিক পানি জমে। উপজেলার মোট ৬,৮২৯ হেক্টর জমি নীচু জমির আওতাভূক্ত। নিরাইল, মিরিকপুর, নাইকানীবাড়ী, স্থলবল্লা, যৌতুকী, মটেশ্বর, সিঙ্গারডাক, বর্ণিকিশোরী, গাছপাড়া, ঝনঝনিয়া ও পূর্বপৌলীর অংশ বিশেষ এ শ্রেণীর জমির অন্তর্ভুক্ত।

 

মাটির গঠন অনুযায়ী উপজেলার মাটি এটেল এবং এটেল-দোঁয়াশ। তবে বেলে দোঁয়াশ এবং বেলে মাটি দেখা যায় নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে। খাদ্য শস্যের মধ্যে আউশ, বোনা আমন, রোপা আমন, বোরো এবং গম প্রধান। তবে বোরো এবং বোনা আমনের প্রাধান্য রয়েছে। সারা উপজেলাতেই প্রধানত ধানের চাষ হয়ে থাকে। বাসাইল উপজেলায় চামারা নামে একটি দেশী জাতের ধানের চাষ ব্যাপকভাবে করা হয়ে থাকে। বোরো কাটার পর বোনা আমন বা গভীর পানির রোপা আমন হিসাবে চামারা ধানের চাষ হয়। মে-জুন থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত এধানের চাষ হয়। চামারা ধানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের জন্য স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘‘ইষ্টির সেরা মামারা, ধানের সেরা চামারা।’’ খাদ্য শস্য ব্যতিত অন্যান্য ফসলের মধ্যে সরিষার আবাদের প্রাধান্য রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু কিছু জায়গায় তিলের চাষ করতে দেখা যায়। বেলে দোঁয়াশ মাটিতে খেসারী, মসুর ও মাসকালাই জাতীয় ডালের এবং অন্যান্য এলাকায় আলু, পানিকচ,ু ওলকচু, মূলা, মিষ্টিআলু প্রভৃতি মূল জাতীয় ফসলের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া মৌসুমভেদে বিভিন্ন শাক-সবজির মধ্যে বাধাঁকপি, ক্ষিরা, চালকুমড়া, চিচিংগা, ঝিংগা, টমেটো, ডাটা, ঢেড়শ, ধুনদুল, পালংশাক, পুইশাক, ফুলকপি, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক,  লাউ, সশা, সিম এবং মশলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, হলুদ, আদা, ধনিয়ার চাষ হয়। অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট এবং আখের চাষ এবং সবুজ সার হিসাবে ধইঞ্চার চাষ হয়ে থাকে। ফল জাতীয় ফসলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা এবং নারিকেল প্রধান। এছাড়া, লিচু, জাম্বুরা, বরই, বেল এবং বাড়ির আশে পাশে কলার চাষ হয়ে থাকে। বিশেষায়িত ফসলের মধ্যে সরিষা প্রধানত কাঞ্চনপুর, কাজিরা পাড়া, পৌলী, যৌতুকী, মটেশ্বর, তাড়াবাড়ী, ছনকাপাড়া, সৈদামপুর, সিঙ্গারডাক, কাউলজানী উত্তরপাড়া, নয়ার হাট, ফুলকী, ঝনঝনিয়া, তিরঞ্চ, গাছপাড়া, ফুলকী দক্ষিণপাড়া এলাকায় চাষ করা হয়ে থাকে। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত সরিষা আবাদের সময়। ভুট্টা প্রধানত আইসড়া, বাসাইল পশ্চিম পাড়া, নাহালী, মটরা, ভাটপাড়া, কাশিল, দেউলী, কামুটিয়া এলাকায় চাষ করা হয়ে থাকে। নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত ভুট্টা আবাদের সময়। ডাল প্রধানত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চাষ করা হয়ে থাকে। নদী তীরবর্তী বেলে-দোয়াশ মাটিতে ডাল উৎপাদন করা হয়। আখ প্রধানত কাঞ্চনপুর, আদাজান, বাসাইল, ঘোষাখালী, হাবলা পূর্বপাড়া, বাসাইল পূর্বপাড়া, বাসাইল পশ্চিমপাড়া, বালিনা, আইসড়া, একঢালা প্রভৃতি গ্রামে অক্টোবর-নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাষ করা হয়ে থাকে। গম সাধারণত কাশিল, কাঞ্চনপুর, আইসড়া, একঢালা, জশিহাটী, বিয়ালা, নাকাছিম প্রভৃতি এলাকায় চাষ করা হয়। এসব এলাকায় গম উঠে যাবার পর পাটের চাষ করা হয়। যেসব জমি সাধারণত পতিত থাকে সেসব জমিতে মার্চ থেকে জুলাই-আগষ্ট পর্যন্ত বীজ ও জ্বালানীর জন্য ধইঞ্চার চাষ হয়ে থাকে।

একসময় বাসাইল ছিল মৎস্য সম্পদে পরিপূর্ণ এক জনপদ। বাসাইলের মাছের সুখ্যাতি ছিল সর্বত্র। কই, শিং, মাগুর এবং বোয়ালের জন্য বিখ্যাত ছিল এই বাসাইল। কিন্তু কালের আবর্তে বাসাইল হারিয়েছে তার এই মৎস্য সম্পদকে। পলি পড়ে বাসাইলের নদ-নদী, খাল-বিল, রাক এর গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে প্রায় শুকিয়ে যায় সব এলাকা। পানি সেচে মাছ ধরা এই এলাকার এক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে মাছের পোনাসহ প্রয়োজনীয় খাবারের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একারণেও মাছের পরিমাণ  হ্রাস পেয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। প্রায় পৌনে দ’ুলক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই এলাকার মাছের চাহিদা ৩,৫০৬ মেঃ টন। বর্তমান বার্ষিক উৎপাদন ২,০৭২ মেঃ টন। মাছের উৎপাদন হিসাবে বাসাইল ঘাটতি এলাকা। প্রধান নদী ঝিনাই, বংশাই ও লৌহজং এবং তার শাখা নদী, খাল বিল ও নালা এবং উপজেলার মোট ২৬ টি বিল মূলত চাহিদার সিংহভাগ মাছ উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া ১,০৮০টি বেসরকারী এবং ১৭টি সরকারী খাস পুকুর ও জলমহাল উপজেলার মৎস্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নে ১৭৭টি, কাশিল ১৪২টি, হাবলা ২০৯টি, কাঞ্চনপুর ১৫৯টি, কাউলজানীতে ২০০টি এবং ফুলকী ইউনিয়নে মোট ১৯৩টি বেসরকারী পুকুর রয়েছে। এখনও নদী এবং বিলে প্রাকৃতিক মাছ এবং পুকুরে চাষের মাছের প্রাধান্য রয়েছে। বাসাইলের নদী, বিল আর পুকুরে যে সমস্ত মাছ পাওয়া যায় তা নিম্নররূপঃ

            ক)    নদীঃ         টেংরা, গুলসা, চেলা, বাতাসী, পুটি, বাইল্যা, বাইম, বোয়াল, আইর এবং দেশী চিংড়ি।

            খ)  বিলঃ            টেংরা, গুলসা, পুটি, মলা, শিং, কই, মাগুর, টাকি, শইল, গজার, খলিসা, পলি বাইন, বোয়াল,

                                    কাতলা, রুই, মৃগেল, কালীবাউশ, চান্দা এবং নুন্দা প্রভৃতি।

     গ)        পুকুরঃ       কাতলা, রুই, মৃগেল, কার্প, সরপুটি, পাংগাশ, নাইলটিকা, তেলাপিয়া প্রভৃতি।