বাসাইল, টাঙ্গাইল।
0
বংশী নদী বাসাইল উপজেলার পূর্ব সীমান্ত নির্ধারণী নদী। এ নদী পুরাতন ব্রম্মপুত্র হতে উৎপন্ন হয়ে জামালপুর দিয়ে মধুপুর পৌছে বানার এবং ঝিনাই নদীর শাখার সাথে মিলিত হয়ে ক্রমাগত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। এটি বাসাইল ও সখিপুরকে পৃথক করে মির্জাপুর হয়ে কালিয়াকৈরে এসে দুইভাগে বিভক্ত হয়। একভাগ অর্থাৎ মূল ধারা তুরাগ নদী নামে আরো দক্ষিণ পূর্বে গিয়ে ঢাকা-মিরপুর হয়ে বুড়িগংগায় পতিত হয়। অপরভাগ কালিয়াকৈর হতে আরো দক্ষিণে সাভার হয়ে ধলেশ্বরীতে পতিত হয়। ‘কোম্পানী আমলে ঢাকা’ নামক পুস্তকে জেমস টেলর লিখেছেন এ জেলার মাঝারি ধরনের নদীসমূহের মধ্যে বংশাই নদীই সবচাইতে দীর্ঘ। উৎপত্তিস্থল হতে সংগমস্থল পর্যন্ত এটি দৈর্ঘে প্রায় ১০০ মাইল। এ বংশী নদী বাসাইল সখিপুর সীমান্তে ডুমনীবাড়ী দিয়ে বাসাইলে প্রবেশ করে। অতঃপর কল্যাণপুর, গিলাবাড়ী, সুন্না, হান্দুলীপাড়া, মিরিকপুর, রাশড়া, সৈদামপুর, পূর্বপৌলী দিয়ে মির্জাপুরে প্রবেশ করে। এ নদীর গতিপথ অত্যন্ত সর্পিল। অজস্র্ বাঁক সৃষ্টি করে সামনের দিকে এগুতে থাকে। বাসাইল উপজেলার অংশ পেরুতেই এ নদী সৃষ্টি করেছে প্রায় ১ শত বাঁক। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য মৌসুমে বংশী নদীর বাঁক পার হতে মাঝি মাল্লারা হাঁপিয়ে উঠে। কোন কোন বাঁক এরকম যে অনেকদুর ঘুরে আসার পর দেখা যায় পূর্বস্থান থেকে মাত্র ৬০/৭০ গজ এগিয়েছে। বংশী নদীর বাঁক নিয়ে এখানে এক মজার গল্প প্রচলিত আছে। তাঐ বাড়ীতে পুতরা এসেছে বেড়াতে। যখন সে নৌকা নিয়ে বাড়ীতে এসে পৌঁছল তখন বাড়ীতে আছেন মাঐ মা। এমন কেউ নেই যে দোকান থেকে কিছু কিনে পুতরাকে আপ্যায়ন করা যায়। ওদিকে মাঐ মাও অপ্রস্ত্তত, ঐ মূহুর্তে ঘরেও নেই কিছু। মাঐ মা বুদ্ধি করে ঘাটে নৌকা ভিড়ানো পুতরাকে ডেকে বললেন, বাবা নৌকাটা বাড়ীর পেছনের ঘাটে এনে রাখো। সরলমনা পুতরা নৌকা ছাড়ল একই বাড়ীর অন্য ঘাটের উদ্দেশ্যে। বংশাই নদীর এই একটি বাঁক ঘুরে অন্য ঘাটে নৌকা আনতে সময় লাগল দুই ঘন্টা। ততক্ষণে দুপুরের রান্না-বান্না শেষ। মাঐ মা পুতরাকে দুপুরের খাবার দিলেন প্রসন্নমনে। এ গল্পটি দিয়েই বুঝা যায় যে, বংশী নদীর বাঁক কত জটিল। স্থানীয়ভাবে এ নদীর একটি বাঁক ‘চিনা শুকানোর বাঁক’ নামে পরিচিত।
বংশী নদী সখিপুরের পাহাড়ী আর বাসাইলের নিম্নাঞ্চলকে পৃথক করেছে। বাঁকসর্বস্ব এ নদীর কারণে বাসাইল হয়েছে সম্পূর্ণ লাল মাটিমুক্ত। পাহাড় আর জলার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বংশী নদী বাসাইলকে দান করেছে তার ভৌগলিক স্বাতন্ত্র্য।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস